সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

মতি ভাই আল্লাহকে ভয় করুন


জসিম উদ্দিন

বলা হয় সাংবাদিকরা সমাজের আয়না। কিন্তু বড় আয়না যদি ছোট আয়নাকে ভেঙ্গে ফেলে তখন কোন চিত্র উঠবে? আমি জানি আমার বা আমার মতো বঞ্চিত কোনো সাংবাদিকের কথা কোনো পত্রিকা প্রকাশ করবে না। বিশেষত ব্যক্তিটি যদি হয় মতিউর রহমান চৌধুরীর মতো প্রভাবশালী কোনো সাংবাদিক। তবু যে পরিসরেই হোক বলতে হবে।

নিঃসন্দেহে মতিউর রহমান চৌধুরীর সাংবাদিকতার জীবন বর্ণাঢ্য। তবে তার বর্ণাঢ্য জীবনেও রয়েছে কিছু কলঙ্কের দাগ। দেশের বেশিরভাগ প্রগতিশীল সাংবাদিকের চোখে ধুলো দিয়ে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য করেছিলেন এই মতি ভাই। এমন কি সাংবাদিক পরিচয়ে নেয়া সাংবাদিক কলোনির পাঁচ কাঠার ১০৫ নং প্লটটিও তিনি বিক্রি করেন রাজাকার কামারুজ্জামানের কাছে। প্রায় এক যুগের বেশি সময় কাজ করার সময় প্রায়ই ভাবতাম - মতি ভাইকে কি আসলেই চিনি? 

অনেক চড়াই উৎরাই পার করেছেন মতিউর রহমান চৌধুরী। মৌলভীবাজারের ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে সাংবাদিকতা শুরু করা মতি ভাইকে ১৯৭৪ সালে লবণ মজুদ করার অভিযোগে বাংলার বাণী পত্রিকা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি। দৈনিক সংবাদে থাকাকালে চিত্রনায়িকা রোজী সামাদের (পরবর্তীতে রোজী আনসারী) সঙ্গে বিবাদের কারণে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে মতি সাহেবের এক্রেডিয়েশন কার্ড বাতিল করা হয়েছিল। সাপ্তাহিক খবরের কাগজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তাকে দেশে ঢুকতে দেয়া হয় নি প্রায় আট মাস। জীবনে এমন বাধা সামলে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন মতিউর রহমান চৌধুরী। আজকের কাগজ, দৈনিক সংবাদ সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় নামে-বেনামে লিখে গেছেন অবিরত।

মূলত ইত্তেফাকের কূটনৈতিক রিপোর্টার হওয়ার সুবাদে নতুন এক মতি চৌধুরীর জন্ম হয়। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক একটি বিশেষ চক্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন তিনি। ভয়েস অব আমেরিকায়ও যুক্ত হন।  

১৯৯৮ সাল - আমার সাংবাদিক জীবনের শুরু মাত্র। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সাংবাদিক এম এ রহিম ভাই ও নুরুল আমিন ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা সিলেটের প্রায় দেড়শ সাংবাদকর্মী দৈনিক বাংলাবাজার ছেড়ে যোগ দিলাম মানবজমিনে। পত্রিকা প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। দেখতে দেখতে দাঁড়িয়ে গেল মানবজমিন। কিন্তু মতি ভাই যে কখন প্রতিক্রিয়াশীল পথে হাঁটছিলেন তা আমরা অনেকেই টের পাই নি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মানবজমিন অনেকটা সরকার দলীয় পত্রিকায় পরিণত হয়। যদিও এরশাদ ও এক বিচারকের কল রেকর্ড ফাঁস করার অভিযোগে তার ৬ মানের সাজা হয়েছিল। কিন্তু এটি তার জাতীয়তাবাদী হতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। তারেক রহমান কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের নিয়ে হাওয়া ভবনে গোপন একটি পরিষদ গঠন করেছিলেন যার অন্যতম ছিলেন মতি ভাই। কিন্তু এতকিছুর পরও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মোর্শেদ খানের রোষানলে পড়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল তাকে। তবে এতে করে পত্রিকার আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়নি। মতি ভাইও কেবলা পরিবর্তন করেন নি।


https://web.archive.org/web/20170623170419/http://www.asiantribune.com/index.php?q=node/1507

২০০৭ সাল! মাথায় বজ্রপাত পড়ার মতো একটি খবর পেলাম। মানবজমিনে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিলেট ব্যুরো প্রধান এম এ রহিম ভাইকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে! একে একে ২৩ জনকে বিনাকারণে পদচ্যুত করা হলো। বেতন ভাতা দেনা পাওনা পরিশোধ না করে বিনা নোটিশে আকস্মিক এ অব্যাহতি আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি নি। উপায়ান্তর না দেখে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হই। চট্টগ্রামের দ্বিতীয় শ্রম আদালত মানবজমিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইআর ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ অনুসারে আইনানুগ পাওনাদি ও সুবিধাদি প্রদানসহ এমএ রহিমকে সিলেট ব্যুরোতে স্বপদে বহাল রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু সে নির্দেশ পালন করা হয় নি অদ্যাবধি।

এতদিনে বঙ্গোপসাগরের জল অনেক গড়িয়েছে। মতিউর রহমান চৌধুরী ইতোমধ্যে টিভি ব্যক্তিত্বও বনে গেছেন। তবে জঙ্গি খেতাবও জুটেছে। মতিউর রহমান চৌধুরীকে জঙ্গিবাদের সহযোগী ও মৌলবাদীদের উস্কানিদাতা হিসেবে উল্লেখ করে "Voice of America Correspondent Spouts Radical Propaganda". শিরোনামে এশিয়ান ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ইন্টারফেইথ নামের একটি সংগঠন থেকেও তার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা হয়। সম্ভবত তখন থেকে তার সঙ্গে ভয়েস অব আমেরিকার আর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সম্পর্ক নেই। 


এতকিছু লিখতে চাই নি। কিন্তু লিখতে হলো দায়বদ্ধতা থেকে। মতি ভাইয়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করা আরও কত এম এ রহিম ভাই যে নিদারুণ কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে তা স্মরণ  করিয়ে দেয়ার জন্য। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে যদি বোধোদয় হয়!