সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

তারেকের "খোয়াব" ভবন : জলসা থেকে হত্যাকাণ্ড বহু অপকর্মের সাক্ষী!

 


যে বিলাসবহুল প্রাসাদে দেশি-বিদেশি নায়িকা ও শিল্পীদের নিয়ে নিয়মিত জলসার আয়োজন করা হতো, যেখানে শত কোটি টাকার লেনদেন হতো, যেখানে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাসহ বহু ষড়য্ন্ত্রের জাল বোনা হয়েছিল; গাজীপুরের সেই খোয়াব ভবন এখন যেন ভূতুড়ে বাড়ি! চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র ৬ মাসের মাথায় স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিনের নামে কেনা এ জায়গায় ৩ তলা ভবনটি নির্মাণ করেন মামুন। সম্পূর্ণ বিদেশি পোড়া মাটি (টেরাকোটা) টাইলসসহ নানা ধরনের নকশী গাঁথায় ভবনটি তৈরি করা হয়। অভ্যন্তরে রয়েছে বিদেশ থেকে আনা বাহারি রংয়ের লাইটিং ও শিল্পীর হাতের তৈরি কাজ। কেয়ার টেকার শামসুর রহমানের তত্ত্বাবধানে থাকা ভবনটির সেই জৌলস না থাকলেও এখনো স্থানীয় জনগণের মুখে মুখে ফেরে "জলসা ভবন" ভবনের নানা ঘটনার কথা। বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনতি হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছিল এই ভবনকে কেন্দ্র করেই।

তারেক-মামুনের মনোরঞ্জন করতে দেশের উঠতি মডেল, নায়িকা ও নায়িকাদের অনেককে রাত কাটাতে হয়েছে গাজীপুর শহরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকায় নির্মিত খোয়াব ভবনে। সংবাদকর্মীদের অনেকেই অবগত আছেন যে, প্রাইভেট ফাংশনের নামে ভারতীয় নায়িকাদের অনেককে বিশেষ ফ্লাইটে ভিসা ছাড়াই আনা হতো। এক বা দুই রাতের জন্য ব্যয় হতো কয়েক লক্ষ টাকা। আর তাদেরকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে হাজির থাকতেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। দেশি মডেল, গায়িকা ও নায়িকা ছাড়াও কোনো পাবলিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হয়ে শিল্পা শেঠি, মমতা কুলকার্নি, রাভিনা টেন্ডনের মতো তারকাদের আগমন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল।

নায়িকা-গায়িকা নিয়ে এসে অনৈতিক কার্যকলাপ, মদ এবং নাচ-গানের এই উৎসব ছিল নিত্যনৈমত্যিক ব্যাপার এবং এই ঘটনাগুলো যখন ঘটতো তখন খোয়াব ভবনের পুরো এলাকা ঘিরে রাখতো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। ‘প্রাইভেট ফাংশন’ এর নামে খোয়াব ভবনের গোপন পার্টিতে অতিথি হতেন তারেকের ঘনিষ্ঠরা।

‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ খ্যাত গায়িকা আলিশা চিনয়ের ঢাকার কনসার্ট থেকে খোয়াব ভবনে নেয়ার ঘটনা কূটনৈতিক পর্যায়ে পোঁছেছিল। ২০০৫ সালে ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলে পৌছানোর পরই আয়োজককে জানানো হয় আলিশাকে খোয়াবে পাঠাতে। আলিশাকে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় আয়োজককে। আলিশা শরণাপন্ন হন ভারতীয় দূতাবাসের। ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র দপ্তরে কঠোর মনোভাব প্রকাশের পর খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরদিন আলিশা এবং কনসার্টের অন্য অংশগ্রহণকারীরা ভারতে চলে যান।

একজন আলিশা হয়তো ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের উঠতি মডেল ও নায়িকাদের অনেকে খোয়াবে গিয়েছিলেন পরিস্থিতির শিকার হয়ে। স্যুটিং বন্ধ করে দেয়া, পুলিশি হয়রানি ও সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে যেভাবে নারীদের বলপূর্বক আনা হতো তা ফিল্মের কাহিনীকেও হার মানায়।

তারেকের নারী লোলুপতার ঘটনাগুলো বিএনপিকে ভোগাচ্ছে এখনো। তারেকের অপকর্ম চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের সঙ্গে বিএনপির যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তা পূরণ হবার নয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একের পর এক নারী কেলেঙ্কারি বা নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো তারেক রহমান তথা বিএনপির রাজনীতিতে কলঙ্ক হয়েই থাকবে।