উইকিলিকসে প্রকাশিত নথিতে আলোচিত বাংলাদেশের রাজনীতিকদের অন্যতম তারেক রহমান। উইকিলিকসের নথিতে জানা যায় কিভাবে অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাইর খাস সাগরেদ কামারুলকে (মাহতাব খামারু) তারেকের টেলিফোনে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় র্যাব!
বিএনপি বরাবর তারেক চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র দাবি করে গ্রেনেড হামলায় তাকে ফাঁসাতে সরকার ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে! তারেককে আগামীর নেতা হিসাবেও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা-তদবিরও করে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলটি। কিন্তু উইকিলিকসের নথির তথ্যমতে ঢাকাস্থ মার্কিন কূটনীতিকরা বিএনপির পারিবারিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ উত্তরসূরিকে `জঙ্গি মদদদাতা`সহ নানান বিপদজ্জনক অভিধায় চিহ্নিত করে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে লিখেছেন, তারেক যাতে সেদেশে ঢুকতে না পারেন!
ঢাকার মার্কিন কূটনীতিকরা তারেকের ব্যাপারে অবাঞ্ছিত সব বিশেষণ লিখছেন! মোস্ট ওয়ান্টেড নিষিদ্ধ মানুষজনের পোর্টফলিওতেই তা শুধু ব্যবহার হয়! যদ্দুর জানা যায় এর আগে এ ধরনের বিশেষণসহ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী আর সেই বিতর্কিত পুলিশ অফিসার কোহিনুর মিয়ার ক্ষেত্রেই আরোপ করা হয়েছিল!
তারেকের ব্যাপারে ঢাকায় কাজ করা সবশেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি তার দেশকে লিখেছেন, ‘বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জিয়াউর রহমানের কুখ্যাত বড় ছেলে এবং মায়ের উত্তরসূরি’, ‘ভয়ঙ্কর রাজনীতিক এবং দুর্নীতি ও চুরির মানসিকতাসম্পন্ন সরকারের প্রতীক’ উল্লেখ করে তাকে বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থের প্রতি হুমকি হিসেবেও দেখানো হয়। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ওয়াশিংটনে পাঠানো রিপোর্টে রাষ্ট্রদূত তারেক রহমানকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুষ্টু এবং ভয়ঙ্কর পুত্র অভিহিত করেন।
মারিয়ার্টির রিপোর্টে তারেকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির বিনিময়ে দেশের মন্ত্রিত্ব বিক্রির অভিযোগও করা হয়। এতে বলা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠন ও নির্বাচনে জয়লাভে কৌশলগত বুদ্ধি প্রয়োগের কৃতিত্ব তার। ৬০ জনের মন্ত্রিপরিষদের এক-তৃতীয়াংশই তিনি পূরণ করেছেন বা বিক্রি করেছেন। সমালোচকরা বলেন, তিনি খুবই নির্দয়, দুর্নীতিগ্রস্ত, একাডেমিক পড়াশোনার অবস্থাও খুব ভালো নয়, রাজনীতিতে অপরিপক্ক। `হাওয়া ভবন` নামে একটি বাসা থেকে তিনিই মূলত সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতেন। ওই ভবনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল তার `ছায়া সরকার`।
উইকিলিকসের নথি বিউটেনিস, গীতা পাসি প্রমুখের বরাত দিয়ে এসেছে। তারেকনামার নানা তথ্যে তৎকালীন প্রধানন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর নানা উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। এমন একটি রিপোর্টেই উঠে এসেছে ড সিদ্দিকী বলছেন, কী করে ছেলে তারেকের দুর্নীতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁর মা খালেদা জিয়া!
তারেকনামা’র কতিপয় চুম্বক তথ্যঃ সরকারি ক্রয় এবং রাজনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘুষ চাইতেন তারেক। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎ ও কর ফাঁকি অনেক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তিনি মুক্তি পেয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে গভীর আঁতাতের মাধ্যমে তারেক বিচার প্রক্রিয়ায় কারসাজি করতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার জামিন আটকানোর যে চেষ্টা করেছিল তাকে জয় করতে সক্ষম হন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি ডলার অর্জনের দায়ে গুরুতর অভিযোগ এনেছে। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলাও রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে এক রিপোর্টে রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি মার্কিন কোম্পানি সিমেন্সের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণসহ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কয়েকটি মামলার সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে সিমেন্স মামলার বিবরণে মরিয়ার্টি বলেন, ওই প্রত্যক্ষদর্শী তারেক ও তার ভাই কোকোর কাছে সিমেন্সের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষ পৌঁছে দেন।
সিমেন্সের চুক্তির কাজের মোট অর্থ থেকে প্রায় ২ শতাংশ ঘুষ নেন তারেক। যা মার্কিন ডলারে পরিশোধ করা হয়। মামলাটি এখন মার্কিন বিচার বিভাগ এবং এফবিআইও দেখভাল করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরাত দিয়ে মরিয়ার্টির রিপোর্টে বলা হয়, এসব ঘুষ ও চাঁদাবাজির বাইরেও তারেক ব্যাপক অর্থ তছরুপে জড়িত ছিলেন। কয়েকজন সহচরের মাধ্যমে তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ফান্ডের ৩ লাখ ডলার আত্মসাৎ করেন। দুদকের বরাতে মরিয়ার্টি আরও বলেন, তারেক ছিলেন ওই তহবিলের সহ-স্বাক্ষরদাতা। ওই ফান্ডের অর্থ দিয়ে তিনি নিজ শহরে একটি জমি কিনেছেন। এছাড়া ওই তহবিলের অর্থ তিনি ২০০৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির সদস্যদের মধ্যেও বিলি করেছেন।
আরও বলা হয়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মধ্যে ছিল আরেক `ছায়া সরকার`। হাওয়া ভবনে বসে এ সরকার চালাতেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন দল ও জোটের উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েক নেতা।
এমন আরো হাজার হাজার শব্দ উঠে এসেছে উইকিলিকসের তারেক রহমান সংশ্লিষ্ট নথির ফর্দে ফর্দে!
সূত্র:
1. VISAS DONKEY CORRUPTION 212(F) (RAHMAN, TARIQUE)
https://wikileaks.org/plusd/cables/08DHAKA1143_a.html
2. Tarique okayed Huji plot (August 21 grenade attack in 2004 )
https://wikileaks.org/gifiles/docs/69/694659_bangladesh-ct-tarique-okayed-huji-plot-august-21-grenade.html
3. https://wikileaks.org/plusd/cables/09DHAKA1029_a.html
4. https://wikileaks.org/plusd/cables/09DHAKA1029_a.html