সর্বশেষ সংবাদ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

প্রোটোকল ভেঙ্গে ঘাতক জানজুয়ার মৃত্যুতে খালেদার শোক প্রকাশ


২৪ শে মার্চ ১৯৭১। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নবপ্রতিষ্ঠিত ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন জানজুয়া এবং জেনারেল জিয়া (তখন মেজর জিয়াউর রহমান) ছিলেন উপ-অধিনায়ক। জানজুয়ার নির্দেশে জিয়া চট্রগ্রাম বন্দরে গিয়েছিল পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ সোয়াত থেকে বাঙালিদের মারার জন্য আনা অস্ত্র খালাস করতে। কিন্তু বাঙালিদের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়ে তিনি কক্সবাজার চলে যান। ২৭ মার্চ তাকে ফিরিয়ে আনা হলে বাধ্য হয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। খালেদা তখনও চট্রগ্রামে ছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে খালেদা ও জানজুয়ার কোনো খবর পাওয়া যায় না। তবে নয় মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা অভিযানে সরাসরি অংশ নেন জানজুয়া। নির্বিচারে বাঙালি নিধন-ধর্ষণ-লুটপাটের জন্য সেও দায়ী। ১৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণকারীদের একজন জানজুয়া।

মেজর রফিক তার বইতে উল্লেখ করেছেন, ১৯৭১ এর মার্চ মাসে খালেদা তার স্বামী জিয়ার সাথে চট্রগ্রামে ছিল। যুদ্ধ শুরুর পর খালেদা তার স্বামীকে চট্রগ্রামে ফেলে রেখে কিংবা জিয়ার নির্দেশে ঢাকায় চলে যান এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি আর্মিদের কাছে উঠেন। খালেদা জিয়া যে জানজুয়ার কাছেই অবস্থান করেছেন তা অজানা বিষয় নয়।

জেনারেল আসিফ নওয়াজ জানজুয়া পরের ২২ বছর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতেই ছিলেন।  আইএসআই এর প্রধানও হয়েছিলেন। বলা হয় তার প্রভাবেই ৯১ এর নির্বাচনে আইএসআই থেকে বিএনপিকে পাঁচ কোটি রূপি পেয়েছিল যা আলোচিত ঘটনা। 

১৯৯৩ সালের ৮ জানুয়ারি জেনারেল জানজুয়ার মৃত্যু হয়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে শোকবার্তা পাঠান খালেদা। পরদিন দৈনিক সংবাদ, ইত্তেফাক, অবজারভারসহ বাংলাদেশের সব পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় এ শোকবার্তা ছাপা হয়। ‘পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল নওয়াজের ইন্তেকাল: খালেদা জিয়ার শোক’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিফ নওয়াজের আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন। তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। [সূত্র : বাসস, দৈনিক সংবাদ, ৯ জানুয়ারি, ১৯৯৩]

এ নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। খালেদা জিয়া জেনারেল জানজুয়ার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মনস্থ করেছিলেন। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কূটনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে- এমন শঙ্কা থেকে কিছু লোক তাকে বিরত রাখে।

জেনারেল জানজুয়ার মৃত্যুতে শোকবার্তার অর্থ হতে পারে - ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে হানাদার বাহিনী যে ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে, খালেদা জিয়ার কাছে তা দূষণীয় কিছু ছিল না! খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে জাগজিত সিং অরোরার মৃত্যুতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার অকৃত্রিম এই বন্ধুর প্রতি বাংলাদেশ বা দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোন শোকবার্তা পাঠানো হয় নি।

বাংলাদেশে গণহত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী আসিফ নওয়াজ জানজুয়ার মৃত্যুতে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে পাঠানো খালেদা জিয়ার বার্তা থেকে স্পষ্ট একটি অবস্থান আমরা পেয়ে যাই- ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে সমব্যাথী নন এবং একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানের যারা গণহত্যা চালিয়েছিল তিনি তাদের সঙ্গেই আছেন। বর্তমান বিএনপি অবস্থানও ভিন্ন কিছু নয়।